Birth certificate correction জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার নিয়ম
জন্মনিবন্ধন সংশোধনঃ জন্মনিবন্ধন সংশোধন করা প্রত্যেক নাগরিকের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু, আমাদের বেশিরভাগ জন্মনিবন্ধন গুলো পূর্বে নিবন্ধন করা হয়েছে সেগুলো অনলাইনে সঠিক ভাবে নিবন্ধিত না হওয়ার কারনে দেখা যায় যে, সার্টিফিকেট এর সাথে বয়সের মিল নেই, নামের বানান ভুল ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায় বেশী।
জন্মনিবন্ধন সংশোধন
আপনি যখন পর্যন্ত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে না পারবেন ততক্ষন পর্যন্ত জন্মনিবন্ধন এক মাত্র নাগরিক সনদ হিসেবে কাজ করে। দেশের প্রতিটি সেবা ভোগ করার জন্য জন্মসনদ প্রয়োজন পড়বেই। জন্মসনদ ছাড়া আপনি কোনো সেবা গ্রহণ করতে পারবেন না। তবে, আপনার হাতে জন্মনিবন্ধন সনদ রয়েছে তবে সেখানে যদি ভূল থাকে তবে সেটি দিয়েও কোনো কাজ হবে না।
জন্মনিবন্ধন সংশোধন করতে অনেকেই নানান ঝামেলা মনে করেন। কোথায় থেকে ঠিক করবেন এ নিয়ে পড়ে যান বিপাকে। কিন্তু আপনি কি জানেন? আপনি আপনার হাতের ফোন টি দিয়েই আপনার জন্মনিবন্ধন এর যে কোনো ধরণের ভুল তথ্য সংশোধন করে নিতে পারবেন।
প্রিয় পাঠকগন, আমাদের আজকের আর্টিকেলে জানাবো কিভাবে সহজেই আপনারা জন্মনিবন্ধন সংশোধন করতে পারেন বাসায় বসে অনলাইনের মাধ্যমে। জন্মনিবন্ধন সংশোধন করার জন্য কি কি প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র এর প্রয়োজন। জন্মনিবন্ধন সংশোধন করার জন্য কত টাকা ফি দিতে হবে ইত্যাদি সব থাকছে এক পোষ্টে।
জন্মনিবন্ধন সংশোধন এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র
জন্মনিবন্ধন সংশোধন এর জন্য বাসার পূর্বে আপনাকে নির্ধারিত কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করে রাখতে হবে। যখন, আপনি জন্মনিবন্ধন সংশোধন করবেন তখন প্রমাণ হিসেবে এ সকল কাগজ পত্র গুলোকে দেখাতে হবে। নিম্নে বিভিন্ন জন্মনিবন্ধন সংশোধন এর ধরণ অনুযায়ী কাগজপত্র এর তালিকা দিয়ে দিলাম-
1- জন্মনিবন্ধনে নিজের নামের বানান ও তথ্য সংশোধন
- জাতীয় পরিচয় পত্র (যদি থাকে)
- এসএসসি বা জেএসসি বা সমমানের সার্টিফিকেট
- নিজের পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- যে হসপিটালে জন্ম হয়েছে সেটার ছাড়পত্র
- ইপিয়াই কার্ড
2- পিতা- মাতার জন্মনিবন্ধন সংশোধন
- পিতা- মাতার জন্মনিবন্ধন এর সনদ
- পিতা- মাতার ছবি
- পিতা মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র
- পিতা মাতা মৃত হয়ে থাকলে ডেথ সার্টিফিকেট।
3- জন্মনিবন্ধনে ঠিকানা সংশোধন
নিজ এলাকার কাউন্সিলর বা চেয়ারম্যান এর প্রত্যায়ন পত্র
কর পরিশোধ এর রশিদ
জন্মনিবন্ধন সংশোধন এর নিয়ম
জন্মনিবন্ধন সংশোধন এর জন্য আপনি যদি উপরের দেয়া কগজপত্র গুলো সংগ্রহ করে ফেলেন তাহলে আপনি জন্মনিবন্ধন সংশোধন করার জন্য নিচের ধাপ গুলো অনুযায়ী কাজ শুরু করে দিন -
১ম ধাপ - প্রথমেই আপনাকে জন্মনিবন্ধন সংশোধন এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। অফসিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে এখানে ক্লিক করুন। ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পরে নিচের মত একটি ইন্টারফেস দেখতে পাবেন।
২য় ধাপ- ওয়েবসাইটে যাওয়ার পরে এখানে ২ টি ফাকা ফর্ম দেখতে পাবেন। সবার উপরের বক্সে আপনার জন্মনিবন্ধন এর নাম্বারটি সঠিক ভাবে দিতে হবে ও নিচের বক্সে জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী আপনার জন্মতারিখ টি দিতে হবে। এর পরে অনুসন্ধান অপশনে ক্লিক করতে হবে।
৩য় ধাপ- অনুসন্ধানে দেয়ার পরে আপনার জন্মনিবন্ধন এর একটি তথ্য দেখতে পাবেন। নিচের মত -
এখান থেকে নির্বাচন করুন অপশনে ক্লিক করে দিন।
৪র্থ ধাপ- এই ধাপে আপনাকে নিবন্ধন এর কার্যালয়ের ঠিকানা দিতে হবে। আপনি যে দেশ, বিভাগ, জেলা, সিটি কর্পোরেশন / উপজেলা, ইউনিয়ন, অফিস এর ঠিকানা সঠিক ভাবে দিতে হবে। দেয়া হয়ে গেলে পরবর্তী অপশনে ক্লিক করে দিন।
৫ম ধাপ- পরবর্তী তে যাওয়ার পরে জন্মনিবন্ধন সংশোধন মূল ফর্ম টি খুলবে।
এই ধাপেই মূলত আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ টি করতে হবে। সবার উপরে দেখবেন "বিষয় " তার পাশেই দেখবেন " নির্বাচন করুন" অপশন। সেখানে ক্লিক করলে একটি ম্যানু তালিকা খুলবে। আপনি এখান থেকে যে তথ্য টি নতুন করে সংশোধণ করে নিতে চান সেটি সিলেক্ট করতে হবে।
৬ষ্ঠ ধাপ- এবার যে বিষয় টি সংশোধন করবেন সেটির জন্য আলাদা ফর্ম খুলবে নিচের মত।
এখানে, শুরুতেই বিষয় সিলেক্ট করে নিবেন। এর পরে সংশোধিত তথ্যে নতুন যেভাবে তথ্য হালনাগাদ করবেন সেভাবে লিখবেন। এর পরে একটি ক্যালেন্ডার দেখতে পাবেন। সেখান থেকে আপনার জন্ম দিন, মাস, বছর সঠিক ভাবে দিয়ে দিবেন। সব শেষে সংশোধনের কারণ হিসেবে দিবেন " ভুলভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে "
৭ম ধাপ- উপরের সংশোধন এর কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে একটু নিচের দিকে স্ক্রল করলে নিচের মত একটি ফর্ম দেখতে পাবেন।
এখানে, আপনাকে ঠিকানা দিতে হবে। প্রথমে আপিনাকে জন্মস্থানের ঠিকানা ড্রপডাউন ম্যানু থেকে সিলেক্ট করে দেশ, জেলা, গ্রাম, ডাকঘর ইত্যাদি দিতে হবে। এর পরে স্থায়ী ঠিকানা ( যে স্থানে আপনি সবসময় থাকবেন) সেটা দিতে হবে। এর পরে বর্তমান ঠিকানা ( যে স্থানে আপনি বসবাসরত আছেন) সে ঠিকানা সঠিক ভাবে সিলেক্ট করে দিবেন।
৮ম ধাপ- তথ্য দেয়া হয়ে গেলে এবার নিচের দিকে গেলে দেখতে পাবেন আবেদন কারীর তথ্য।
এখানে, জন্মনিবন্ধন সংশোধন এর আবেদন যদি আপনি নিজে করেন তাহলে আপনার নাম ও ফোন নাম্বার ও ইমেইল এড্রেস লিখে দিবেন। এর পরে নিচের দিকে আপনার জন্মসনদ এর নাম্বার টি দিবেন ও জাতীয় পরিচয়পত্র এর নাম্বার। এর পরে সংযোজন অপশনে ক্লিক করে দিন।
৯ম ধাপ- সংযোজনে যাওয়ার পরে আপনাকে এই পর্যায় সংশোধন এর প্রামানপত্র এর স্কান কপি বা মোবাইল তোলা ছবি আপলোড করে দিতে হবে। এর পরে পেমেন্ট এর জন্য "ফি আদায় " অপশনটি দিবেন। ( ফি আদায় দিলে আপনার সংশোধন হওয়া জন্মনিবন্ধন যখন উপজেলা/ ইউনিয়ন পরিষদে চলে আসবে তখন নির্ধারিত ফি দিয়ে সংগ্রহ করতে পারবেন)। এর পরে সাবমিট বাটনে ক্লিক করে দিন। দেয়ার পরে আপনার আবেদন এর প্রিন্ট কপি টি ডাউনলোড করে নিন। যেটা পরবর্তীতে জন্মনিবন্ধন তুলে আনতে প্রয়োজন হবে।
জন্মনিবন্ধন সংশোধন এর ফি কত
উপরের দেয়া নিয়ম অনুযায়ী আপনি সহজেই জন্মনিবন্ধন সংশোধন এর আবেদন সম্পন্ন করে নিতে পারবেন। তবে, এর পরে যখন তুলতে যাবেন তখন নির্ধারিত ফি আপনাকে পরিষোধ করতে হবে। তাই এখান থেকে দেখে নিন ফি সম্পর্কে -
- জন্মনিবন্ধন তথ্য সংশোধন করতে ফি ১০০ টাকা।
- নাম, পিতার নাম, ঠিকানা ইত্যাদি ফি ৫০ টাকা।
- নাম বাংলা ও ইংরেজি করতে ফি নেই।
- জন্মনিবন্ধন বাংলা ও ইংরেজি করতে ৫০ টাকা।
জন্মনিবন্ধন সনদ সংশোধন করতে কতদিন লাগে?
সাধারণ ভাবে আপনার তথ্য যদি সঠিক ভাবে থাকে তাহলে ৩/৪ সপ্তাহ এর মধ্যে পেয়ে যাবেন। আর তথ্যে সমস্যা থাকলে সেক্ষেত্রে সময়ের পরিমাণ টা বাড়তে পারে।
আমাদের শেষ কথা
জন্মনিবন্ধন সংশোধন পোষ্টে আশা করি আপনাদের সহজ উপায়ে বোঝাতে পেরেছি। উক্ত দেয়া নিয়ম মেনে সঠিক ভাবে দিয়ে দিলে কোনো প্রকার অতিরিক্ত ঝামেলা ছাড়া জন্মনিবন্ধন সংশোধন করে নিতে পারবেন৷ এর জন্য আপনার কোথাও যেতেও হবে না। এ ছাড়াও কোথাও বুঝতে অসুবিধা হলে মন্তব্যের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন।