বিসিএস প্রস্তুতি কিভাবে শুরু করব
বিসিএস ক্যাডার হওয়া জীবনের সবচেয়ে কস্টের অর্জনের মধ্যে একটি। আপনি শিক্ষা জীবনে কেমন ধরণের মেধাবী ছিলেন সেটা মোটেও ম্যাটার করে না। সঠিক ভাবে যদি প্রিপারেশন নিয়ে পরিক্ষা দিতে যান তাহলে বিসিএস এর মত দানবীয় পরিক্ষা কে সহজেই টপকাতে পারবেন। জীবনে কোনো কিছু অর্জন করতে হলে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।
শূন্য থেকে যেভাবে শুরু করবেন (BCS Preparation)আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে বিসিএস একমাত্র স্থান যে স্থানে আপনি আপনার মেধা কে সঠিক ভাবে মূল্যায়ন করাতে পারবেন। কিন্তু বিসিএস এর মত স্থানে আপনি কোনো প্রকার পূর্ব প্রস্তুতি ব্যতিত কখনোই ক্যাডার হতে পারবেন না। আপনার মেধা কে সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পূর্ব প্রস্তুতির কোনো বিকল্প নেই।
গাধার মত ৬ ঘন্টা খাটার চেয়ে বুদ্ধি দিয়ে ১ ঘন্টা খাটা উত্তম। অনেকেই মনে করেন যে, দিনে হয়ত ১৫-১৭ ঘন্টা লেখাপড়া করলেই বিসিএস ক্যাডার হওয়া সম্ভব। আসলে আপনি যদি এই ধরণের ধারণা পোষন করেন তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। বিসিএস এর জন্য প্রচুর পড়াশোনা করতে হয় তবে সেটার কিছু দিক নির্দেশনা ও রয়েছে।
প্রিয় পাঠক, আপনি যদি আমাদের এই আর্টিকেল টি খুলে থাকেন ও এই পর্যন্ত পড়ে থাকেন তাহলে আপনি নিশ্চয়ই বিসিএস এর জন্য আগাম প্রস্তুতি শুরু করতে চাচ্ছেন। কিছু নিয়ম ফলো করার মাধ্যমে আপনি যদি আপনার প্রস্তুতি শুরু করেন তাহলে বিসিএস এর প্রস্তুতি আপনার কাছে কখনো কষ্টসাধ্য মনে হবে না। আজকের পোষ্টে আমরা জানবো - বিসিএস প্রস্তুতি কিভাবে শুরু করবেন, অনার্সে অধ্যায়নরত অবস্থায় বিসিএস প্রস্তুতি কেন প্রয়োজন, বিসিএস প্রস্তুতি এর জন্য কোন বই গুলো পড়তে হবে, কোচিং ছাড়া বিসিএস প্রস্তুতি কিভাবে নিবেন। এ ছাড়াও বিসিএস কেন্দ্রিক অনেক গুলো তথ্য আপনাদের জানানো হবে।
বিসিএস প্রস্তুতি Bcs preparation
বিসিএস এর প্রস্তুতি শুরু করার আগে আপনার নিজের মনোবল কে আরো বেশী কঠোর করতে হবে। হতে পারে আপনার সিজিপিএ অনেক কম। কিন্তু সিজিপিএ কখনোই আপনার ক্যাডার হওয়ার পিছনে বাধা দিতে পারবেনা। সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্যুলেন্সার সুশান্ত পাল কে চিনেনা এমন লোক হয়ত খুব এই কম। তার সিজিপিএ ও অনেক খারাপ ছিল শুধু মাত্র সঠিক প্রস্তুতি আর পরিশ্রম তাকে ক্যাডার তৈরি করে দিয়েছে। বিসিএস এর প্রস্তুতি যেভাবে শুরু করবেন-
১- রুটিন মাফিক পড়াশোনা
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। কোনো কারণে ব্রেক নেয়া যাবে না। আপনি আপনার ব্যর্থতা জানেন। আপনি কোন কোন বিষয়ে বেশী দুর্বল সে বিষয় গুলোর উপরে প্রচুর পরিমানে সময় ব্যয় করতে হবে। আপনার প্রস্তুতি এর জন্য সুন্দর একটি রুটিন বানিয়ে নিবেন যেখানে বাংলা, ইংরেজি, গনিত ছাড়াও সাধারণ জ্ঞান, সমসাময়িক জ্ঞান ইত্যাদি পড়তে হবে।
২- সমসাময়িক বিষয় গুলো রপ্ত করা
সদ্য ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা থেকে অনেক ধরণের প্রশ্ন প্রিলি ও ভাইভা তে দেওয়া হয়। এর জন্য নিয়মিত আপনাকে পত্রিকা পড়তে হবে। অন্তত প্রতিদিন এক ঘন্টা সময় ব্যয় করবেন পত্রিকা পড়ার জন্য। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় দুই ধরণের জ্ঞান রাখা আবশ্যক। এই ডিজিটাল যুগে আপনি ফোনের মাধ্যমেই প্রথম আলো কিংবা দ্যা ডেইলি স্টার এর মত পত্রিকা থেকে সাময়িক ঘটে যাওয়া বিষয় গুলো পেয়ে যাবেন।
৩- নোট তৈরি করা
বিসিএস প্রস্তুতি এর জন্য শুধুমাত্র একটা বই আপনার জন্য যথেষ্ট নয়। যত গুলো বই আপনি পড়বেন তার মধ্য থেকে যে বিষয় গুলো বেশী গুরুত্বপূর্ণ সে গুলো কে নোট করে নিতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো হতে পারে কোনো পত্রিকায় পেলেন সেটা ও নোট করে পর্যাপ্ত পরিমান রিচার্স করে ভালভাবে আইডিয়া নিতে হবে। যেমন ধরুন- পদ্মা সেতু আমাদের বাংলাদেশের অন্যতম অর্জন। এবার আপনি পদ্মা সেতু সম্পর্কে যে ধরণের প্রশ্ন মূলত আসতে পারে সে সকল প্রশ্ন গুলোর উত্তর নোট করে পড়াশোনা করতে হবে।
৪- প্রশ্নব্যাংক সংগ্রহ করে পড়া
যে কোনো পরিক্ষায় ভালো নাম্বার পাওয়ার টপ একটি সিক্রেট হলো পূর্বে আসা প্রশ্ন গুলোকে গুরুত্ব দেয়া। না আপনাকে বলছিনা যে পূর্বের প্রশ্ন গুলোই আসবে। আপনাকে খুজে বের করতে হবে কোন টপিক গুলোতে কোন প্রশ্ন গুলো সবচেয়ে বেশী এসেছে। আরো একটি পরিস্কার করে বলি- ধরুন, আপনি পূর্বের ৫ বছরের প্রশ্নব্যাংক গুলো সংগ্রহ করতে হবে। এর মধ্যে কোন বিষয়ের উপর প্রতিবার ফোকাস করে প্রশ্ন করা হয়েছে সেগুলোকে খুজে বের করতে হবে। আর আপনি যদি সেগুলো খুজে বের করে ফেলতে পারেন তাহলে সে ধরণের প্রশ্ন গুলো কে বেশী পরিমানে পড়তে হবে।
৫- বিসিএস মডেল টেস্ট গুলো দিয়ে নিজেকে যাচাই করুন
আপনি যখন কোনো বই ক্রয় করতে যাবেন বিসিএস এর জন্য তখন অবশ্যই একটি মডেল টেস্ট সাথে করে নিয়ে আসবেন। মডেল টেস্ট গুলো আপনাকে আরো বেশী যোগ্য করে তুলবে। যত বেশী পরিমানে আপনি মডেল টেস্ট সম্পন্ন করতে পারবেন তত বেশী আপনার প্রস্তুতি ভালো হবে।
৬- পূর্বের ভাইভা অভিজ্ঞতা গুলো পড়ুন
আমাদের সকলের একটি কমন সমস্যা হলো আমরা ভাইভা পরিক্ষা কে অতিরিক্ত ভয় পেয়ে যাই। বিশেষ করে, আপনি যখন বিসিএস এর মত একটি পরিক্ষায় ভাইভা দিতে যাবেন সেখানে আপনাকে অনেক কিছু যাচাই করা হবে। সাধারণ জ্ঞান, আইকিউ, আন্তর্জাতিক তথ্য, আপনি যে বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন, আপনার বসার স্টাইল, কথা বলার ধরণ ইত্যাদি। এ সকল বিষয়ে আপনাকে তারা পরিক্ষা করবে। তাই বিসিএস এর জন্য প্রস্তুতি যখন নিবেন প্রিলি এর পাশাপাশি ভাইভা তে নিজেকে দাড় করানোর জন্য পূর্বের বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন এমন কারো কাছ থেকে ভাইভা অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা নিন।
৭- ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় পারদর্শী হতে হবে
আমাদের দেশে বেশীরভাগ শিক্ষার্থী দের একটি কমন সমস্যা হলো ইংরেজি ভাষায় দূর্বল থাকা। ইংরেজি তে কথা বলতে না পারা। বিসিএস এর জন্য ভাষাগত দক্ষতা থাকা অনেক বেশী জরুরি। আমরা মোটামুটি বাংলা বলতে পারলেও ইংরেজি বলার ক্ষেত্রে অনেক জড়তা লক্ষ্য করা যায়। বিসিএস এর প্রস্তুতি এর জন্য আপনাকে অবশ্যই ইংলিশ স্পিকিং স্কিল বাড়াতে হবে। ভাইভা বোর্ডে আপনাকে ইংরেজিতেও প্রশ্ন করা হবে এবং সেটির উত্তর সঠিক ভাবে আপনাকে ইংরেজিতে দিতে হবে। এখানে কোনো প্রকার জড়তা থাকলে ভাইভা তে পাস করা অনেক বেশী কঠিন হবে।
শুধুমাত্র ইংরেজি বলতে পারলেই হবে না বরং আপনাকে সঠিক ভাবে ইংরেজি লেখার দক্ষতা ও অর্জন করতে হবে। বিসিএস এ লিখিত এর উপরে ৯০০ নম্বরের পরিক্ষা দিতে হবে যদি আপনি প্রিলি তে পাস করেন। আপনার লেখার ক্ষমতা যদি দ্রুত না হয় তাহলে আপনি সম্পুর্ন নাম্বারের উত্তর দিতে পারবেন না। তাই হাতের লেখা, ভাষাগত দক্ষতা বাড়ানো অনেক বেশী জরুরি ।
৮- বাসায় প্রস্তুতি নিন বেশী
বিসিএস প্রস্তুতি এর জন্য প্রচুর পরিমানে কোচিং সেন্টার রয়েছে। কিন্তু আপনাকে মনে রাখা প্রয়োজন কোচিং সেন্টার আপনাকে বিসিএস ক্যাডার বানিয়ে দিবেনা। কষ্ট আপনাকেই করতে হবে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী কোচিং সেন্টার থেকে প্রস্তুতি নিয়ে বসে থাকেন। আসলে বিসিএস এর প্রস্তুতি এর কোনো শেষ নেই। আপনি যত নিবেন ততই প্রয়োজন বৃদ্ধি পাবে। আপনি জব করেন বা যাই করেন রুটিন মাফিক বাসায় বসে পড়াশোনা করুন।
৯- বিভিন্ন বই, ইতিহাস, জীবনি সম্পর্কে পড়াশোনা করুন
ইতিহাস অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ বিসিএস এর জন্য। বিশেষ করে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ভারতবর্ষের ইতিহাস, শেখ মুজিব এর অসমাপ্ত আত্নজীবনি ইত্যাদি বই গুলো থেকে আপনি প্রশ্ন কমন পাবেন। এর মধ্যে থেকে আপনাকে খুজে নিতে হবে কোন ধরণের প্রশ্ন পূর্বে বেশী এসেছে সেগুলো বাছাই করে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে।
১০- বিখ্যাত উপন্যাস পড়া
বিভিন্ন উপন্যাস থেকে প্রচুর পরিমানে প্রশ্ন আসে প্রিলি তে। আপনার হাতে যদি অনেক বেশী সময় থাকে তাহলে কিছু বিখ্যাত লেখক দের উপন্যাস পড়ে নিতে পারেন। উপন্যাস থেকে যে শুধু প্রিলি বা রিটেনে প্রশ্ন আসবে এমন টা নয়। অনেক বিসিএস ক্যাডার এর ভাইভা অভিজ্ঞতায় দেখা যায় কবিতা ও উপন্যাস সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়।
আমাদের শেষ কথা
বিসিএস প্রস্তুতি কে কখনোই একটি কঠিন বিষয় হিসেবে নিবেন না। আর আপনি একজন মানুষ সফটওয়্যার চালিত যন্ত্র নয় যে দুনিয়ার সব জ্ঞান আপনার মুখস্থ থাকবে। অনেক বেশী পড়াশোনা না করে যে সব বিষয় গুলো পড়াশোনার দরকার নেই সেগুলো বাদ দিয়ে দিন। অতিরিক্ত বিষয় গুলো পড়ে কোনো লাভ এমনিতেও হবে না।