কন্টেন্ট রাইটিং কি? কন্টেন্ট রাইটিং এর বিভিন্ন ধরন গুলো কি কি?
কন্টেন্ট রাইটিং স্টেপ বাই স্টেপ গাইডলাইন।
আপনি কি কন্টেন্ট রাইটার হতে চাচ্ছেন? তাহলে প্রথমে জানতে হবে আপনি কেন কন্টেন্ট রাইটার হতে চান?
এই কেন প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত আপনি কন্টেন্ট রাইটার হতে পারবেন না। কেননা আপনি যখন কোনো জিনিস পেতে চান তাহলে প্রথম সেই জিনিস আপনার প্রয়োজন হতে হবে৷
প্রয়োজন না পড়লে আপনার ঐ জিনিস টা পাওয়ার জন্য তেমন ইন্টারেস্ট থাকবে না। যখন আপনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছেন যে আপনার কন্টেন্ট রাইটার হওয়া দরকার, আপনার স্কিলটা সবার কাছে শেয়ার করা উচিত তাহলে নির্দিষ্ট কোনো বিষয় উপর আপনার লেখা শুরু করতে পারেন।
তারপরের ধাপ একটা প্লানিং প্রস্তুত করা এবং একটা চ্যালেঞ্জ। কিভাবে নিজের স্কিলকে আরও উন্নত করা যায়? এমন কোন স্কিল আছে যেটাতে আপনি ভালো করবেন বলে মনে হয়?
এমন কোন বিষয় যে বিষয় টাতে অধ্যয়ন করলে ভবিষ্যত জিবন সুন্দর হবে?
কন্টেন্ট রাইটিং টা আসলে কি?
কোনো একটা নির্দিষ্ট টপিক এর উপর ভিত্তি করে আপনার জ্ঞান বা তথ্য মানুষ কে শেয়ার করা, যেটা মানুষের জন্য উপকার হয় তার কোনো কাজে ও তার ব্যক্তি জিবনে।
মানুষ বড়ই ভাবনা ময়ী প্রানি। যখন কোনো একটা উদ্যোগ গ্রহন করে বা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে যায় তখন তার বিভিন্ন রকমের তথ্য জানতে ইচ্ছে করে, মনের মধ্যে অহরহ প্রশ্ন জাগ্রত হয়।
মানুষের এই অদম্য আগ্রহের বা জানার ইচ্ছে গুলো পুরন করার যে পন্থা সেটা হলো কন্টেন্ট রাইটিং। আর যারা কন্টেন্ট তৈরি করে তাদের কে বলা হয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। আশা করি বুঝতে পারছেন আমি কি বুঝতে চাচ্ছি।
কনটেন্ট রাইটিং এর বিভিন্ন ধরনঃ
কন্টেন্ট রাইটিং বিভিন্ন রকমের হতে পারে। তবে এক্সপার্ট টা মোটামোটি ১০ ধরনের কন্টেন্ট কে একটু বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে ধারনে করে। আমি ধাপেধাপে এই ১০ টা কন্টেন্ট এর উপর কিছুটা ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করবো।
১। এসইও কনটেন্ট রাইটিংঃ
এসইও এর সম্পুর্ন রুপ হলো সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। এসইও কন্টেন্ট হলো কোনো একটা নির্দিষ্ট টপিকের কনটেন্ট কে গুগলের রুলস ফলো করে কোনো রকম টাকা খরচ করা ছাড়া প্রথম পেজে নিয়ে আসার যে পদ্ধতি।
এর কারন হলো মুলত যখন ভিজিটর এসে গুগলে নির্দিষ্ট কোনো রিওয়ার্ড লিখে সার্চ করবে তখন প্রথম যে রেজাল্ট আসবে ঐ রেজাল্ট এ আমরা বেশির ভাগ মানুষ ক্লিক করি।
এসইও এর মেইন পয়েন্ট গুলো হলো টাইটেল, ডেস্ক্রিপশন, হেডিং টেগ, ইউআরএল, ইমেজ, ইন্টারনাল, এক্সটার্নাল লিংক ইত্যাদি। কনটেন্টে এসইও করা থাকলে ইউজার এনগেজড বেশি হয়।
২। ক্রিয়েটিভ কন্টেন্ট রাইটিংঃ
ক্রিয়েটিভ মানে তো আমরা সবাই বুঝি নিজের মেধা ও মনন খাটিয়ে কোনো কিছু আবিষ্কার করা, নানা রকমের তথ্য বের করা।
যারা কবি, সাহিত্যিক রা আছেন তারা মুলত এই বিষয়ে এক্সপার্ট। নিজের মতো করে কোনো গল্প, কবিতা, উপন্যাস, সৃজনশীলতার যে বহিঃপ্রকাশ সেগুলোই হলো মুলত ক্রিয়েটিভ কন্টেন্ট রাইটিং।
এই ধরনের ক্রিয়েটিভিটি নিয়ে কিছু মানুষ জন্মগ্রহণ করে তারাই এই সেক্টরে ভালো করে। যে কেউ চাইলে নিজের প্রচেষ্টায় ক্রিয়েটিভ কন্টেন্ট রাইটিং এ আসতে পারে সেটা অসম্ভব কিছু না।
৩। লং ফর্ম কনটেন্ট রাইটিংঃ
বিভিন্ন রকমের বড় বড় আর্টিকেল, ব্লগ, প্রেজেন্টেশন যারা লিখে তারাই হলো হলো মুলত লং ফর্ম কন্টেন্ট রাইটার এর অন্তর্ভুক্ত।
এক্ষেত্রে ৫০০- ৫০০০ শব্দের ও কন্টেন্ট হতে পারে। মার্কেটে মুলত লং ফর্ম কন্টেন্ট রাইটিং এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এর মুলত কাজ হচ্ছে কোনো একটা টপিক এর ভিত্তি করে এর সাথে আরও কিছু রিলিভেন্ট টপিক বের করে, আরও ডিটেইলস এ লম্বা কন্টেন্ট শেয়ার করা।
এতে করে মানুষ ঐ টপিক এর উপর একটা সম্পুর্ন আইডিয়া পেয়ে যায়৷
৪। টেকনিক্যাল কনটেন্ট রাইটিংঃ
টেকনিক্যাল সম্পর্কে আপনি তো বুঝতেই পারছেন, কোনো একটা প্রোডাক্ট এর ডেসক্রিপশন লিখা, রিভিউ, কাজের প্রসেসগুলো স্টেপ বাই স্টেপ গাইড, প্রযুক্তি সম্পর্কে নিজের আইডিয়া শেয়ার করা ইত্যাদি।
এই সেক্টরে কাজ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই টেকনিক্যাল জ্ঞান থাকতে হবে ও এ বিষয়ে জানার আগ্রহ থাকতে হবে।
৫। গোস্ট রাইটিংঃ
এই বিষয়টা বলতে আমরা যা বুঝি সেটা হলো অন্যের জ্ঞান কে কিনে নিয়ে বা কন্টেন্ট রাইটার ভাড়া করে কোনো একটা বই বা লেখার যে পদ্ধতি, তারপর ঐ লেখাটা প্রকাশ হবে যিনি রাইটার কে ভাড়া করছে তার নামে।
মানে অন্যের লেখা বা জ্ঞান কে নিজের নামে প্রকাশ করা। বাংলাদেশ এইটার বেশি প্রচলন দেখা যায় না।
৬। ওয়েব বা এড কপি রাইটিংঃ
ওয়েবসাইট এর জন্য আমরা যে কন্টেন্ট গুলো লিখি যেমন হোম পেইজ, কন্টাক্ট পেইজ, এফএ কিউ, এভাউট ইত্যাদি পেইজ এর জন্য যে ধরনের কন্টেন্ট আমরা লিখি সেগুলো হচ্ছে ওয়েব রাইটিং।
আর এড কপি রাইটিং হলো অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য যে লেখা গুলোর দরকার পড়ে সেগুলো হলো এড কপি রাইটিং এর আওতায়।
৭। ইমেইল কপি রাইটিংঃ
আমরা যখন কাউকে কোনো কিছু লিখে ইমেইল করি তখন একটা নিউজলেটার এর মতো করে লেখাগুলো কে সাজাতে হয়।
এইখানে সবকিছু ইনফরমেশন এড করা থাকে। যেমন টেক্সট, লেন্ডিং পেইজ লিংক, কল টু একশন, বিভিন্ন সোর্স ইত্যাদি।
৮। স্ক্রিপ্ট রাইটিংঃ
রাজনৈতিক বিষয়ে আর্টিকেল, আলোচনা ও সমালোচনা, মুভি রিভিউ, বুক রিভিউ, ভিডিও ডেসক্রিপশন, প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন ইত্যাদি হলো স্ক্রিপ্ট রাইটিং এর মধ্যে পড়ে।
এক্ষেত্রে ভালোভাবে রিসার্চ করতে হবে এবং বিভিন্ন রকমের সোর্স লিংক সহ, নানা রকমের প্রামান্যিক উদাহরণ সবকিছু যোগ করতে হবে।
৯। সোস্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট রাইটিংঃ
বর্তমান দুনিয়ায় সোস্যাল মিডিয়াতে এক্টিভটি নেই এমন মানুষ খুবই কম। বাংলাদেশ ফেসবুক টা কে তো সকাল বিকালের বন্ধু মনে করে।
বড় ছোট, মা বাবা, ভাই বোন, ছাত্র, শিক্ষক সবারই মোটামোটি ফেসবুক একাউন্ট আছে। সোস্যাল মিডিয়াতে ফোকাস করে অনেকে অনলাইন বিজনেস, কোর্স, শিক্ষা নিচ্ছে।
স্যোসাল মিডিয়া কে ফেকাস করে, জনপ্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশ্য যে কন্টেন্ট লেখা হয় সেগুলো মুলত সোস্যাল কন্টেন্ট। এক কথায় স্যোসাল পোস্ট কে স্যোসাল কন্টেন্ট বলে।
১০। প্রোডাক্ট রিভিউ রাইটিংঃ
যারা অনলাইনে বিজনেস করে তাদের জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটা প্রোডাক্ট সম্পর্কে যদি মানুষ না জানে, সেটা কিভাবে ব্যবহার করবে, উপকারিতা, কেন প্রোডাক্ট টা কিনবে সেটার সবকিছু একটা ডেসক্রিপশন আকারে লেখা।
প্রোডাক্ট টা ব্যবহার করার পর কেমন লাগল, ভালো নাকি খারাপ, প্রোডাক্ট সম্পর্কে ফিডব্যাক দেয়া হচ্ছে মুলত প্রোডাক্ট রিভিউর কাজ।
আমি মুলত ১০ টা বিষয় নিয়ে একটু একটু ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আশা করি কিছু টা হলেও আইডিয়া পেয়েছেন কন্টেন্ট রাইটিং জিনিস টা আসলে কি এবং সেটা কেমন।
আপনি কেন কন্টেন্ট রাইটিং শিখবেন?
কন্টেন্ট রাইটিং একটা সম্মানজনক পেশা। এর ভবিষ্যত অনেক ভালো। লেখকদের কারনে আজ পৃথিবীতে সভ্যসমাজ টিকে আছে।
লেখকরা মানুষকে তাদের নিজেদের জ্ঞানের কথা, মনের কথা, সাফল্য ও ব্যর্থতার কথা, কাজের কথা সবকিছু শেয়ার করে।
এতে পরবর্তী প্রজন্ম লেখকদের অনুসরণ করার মাধ্যমে নিজের জ্ঞান কে বর্ধিত করতে পারে, নিজের মনুষ্যত্ব কে জাগ্রত করতে সক্ষম হয়। এই পৃথিবীতে বড় বড় লেখকরা কাউকে অনুকরন করে না।
তারা নিজেকে নিজের মতো করে সাজায়, নিজের মেধাকে সান দেওয়ার মাধ্যমে নতুন নতুন জ্ঞানের আবিষ্কারক রুপে পৃথিবীতে মহামানব হিসেবে মানুষের অন্তরে জায়গা করে নেয়৷
তাহলে বুঝতে পারছেন অনলাইনে বা অফলাইনে যারা লিখে তারা নিজের ভালা লাগার বিষয় নিয়ে লিখে, নিজের অনুভূতি মানুষকে শেয়ার করে। মানুষকে ভালো কাজে আহবান করে।
উপসংহারঃ
আপনি যদি ভালো কন্টেন্ট রাইটার হতে চান তাহলে আপনাকে প্রচুর পড়তে হবে এবং রিসার্স করতে হবে এবং নিজের ভাষায় লেখার চেষ্টা করতে হবে।
অন্যজনের লেখা থেকে আইডিয়া নিতে পারবেন কিন্তু আপনি কখনো অন্যকে হুবুহু কপি করতে পারবেন না। কপি করে হয়তোবা সাময়িক রেজাল্ট পাইলেও পাইতে পারেন।
যদি দীর্ঘদিন ফলাফল আসা করেন তাহলে আপনাকে নিজের ভাষায় কন্টেন্ট লিখতে হবে, কস্ট করা কাজ শিখতে হবে, নিজের লেখা পাবলিশ করতে হবে।
গুগুল একটা জিনিস পছন্দ করে এবং সেটাকে দ্রুত রেংক করায় আর সেটা হলো কোয়ালিটি কন্টেন্ট।
কোয়ালিটি কন্টেন্ট মানে বুঝায় নিজের ভাষায়, নিজের মতো করে লেখা, নিজের মনের শব্দ ব্যবহার করে যে কন্টেন্ট লেখা হয়।