ফরজ নামাজের পর হাত উঠিয়ে মোনাজাত করা কি জায়েজ?
ফরজ নামাজের পর হাত উঠিয়ে মোনাজাত করা কি জায়েজ? ফরজ নামাজের পর মোনাজাতের বিষয় নিয়ে বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্ন মত বিরূপ চলছে। তাই এই বিষয়টি একটি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত মোনাজাত এর এই বিষয়টা নিয়ে মুসলমানরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে।
এক পক্ষ বলছেন যে সম্মিলিত মোনাজাত ফরজ নামাজের পর জায়েজ আছে। আরেকপক্ষ বলছেন যে ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত মোনাজাত জায়েজ নেই।
তাই আজকে আমাদের এই বিষয় নিয়েই আলোচনা। আজকে আমার পুরো আর্টিকেলের পড়ার মাধ্যমেই আপনারা জানতে পারবেন যে। কোনটা জায়েজ আছে আর কোনটা নেই। তাহলে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা শুরু করলাম।
ফরজ নামাজের পর হাত উঠিয়ে মোনাজাত করা কি জায়েজ?
ফরজ নামাজের পর হাত উঠিয়ে মোনাজাত করা জায়েজ সম্পর্কে ইমাম এবং মুক্তাদিরগণ বলেন প্রতি ওয়াক্তের ফরজ নামাজের পর ইমাম মুক্তাদী মিলে সমবেতভাবে হাত উঠিয়ে যে দোয়া করা হয় তা ইসলামে আধই বৈধ নয়। কারণ এই নিয়মে রাসুল করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে কখনো দোয়া করেননি।
এবং সাহাবীদের যুগেও কেউ ফরজ নামাজের পর হাত তুলে সমন্বয়ে মোনাজাত করেননি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি যে আমল নিজে করেননি ও সাহাবীগণদের মধ্যেও কেউ করতে বলেননি তা আমাদের পরিহার করা অবশ্যই উচিত।
হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মিলিত মোনাজাত করেছেন কিনা?
নবী করিম সাঃ কোন নামাজের পরে দোয়ার জন্য সম্মিলিত ভাবে হাত উঠাননি তিনি কেবলমাত্র ইস্তেখার নামাজের পরে সম্মিলিত ভাবে হাত উঠেছেন যে তার বোগল পর্যন্ত দেখা যেত।
এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এস্তেস্ক কার নামাজ ব্যতীত অন্য কোন নামাজের পর দোয়া করার জন্য সম্মিলিতভাবে দুহ হাত উঠিয়ে দোয়া করেননি। নবীজি ফরজ নামাজের পর সাহাবীদের আমল সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত আছে-ফরজ নামাজের পর হযরত আবু বক্কর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহা সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, ফরজ নামাজের সালাম সমাপ্ত হবার পর তারা এত তাড়াতাড়ি উঠে যেতেন মনে হতো যেন তারা গরম পাথরের অবস্থান করেছিলেন।
ফরজ নামাজের পরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম নিজে দোয়া পাঠ করতেন এবং সাহাবীগণদের দোয়া করার জন্য উৎসাহ দিতেন। কিন্তু কোন হাদিসেই এমনটা পাওয়া যায় নিজে তিনি তার সাহাবীগণদের নিয়ে একত্রে হাত উঠিয়ে দোয়া করেছেন। তবে নবীজি ফরজ নামাজে সালাম ফিরিয়ে অনেক দোয়া দোয়া পাঠ করতেন। .
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনে একবারেও সমবেত সাহাবীদের নিয়ে ফরজ নামাজ শেষে হাত উঠিয়ে দোয়া করেছেন এমন প্রমান হাদিসের কোন কিতাবে পাওয়া যায়নি। এবং এর কোন দলিল নেই। তাই ধর্মীয় বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়টিকে বিদাত বলে সাব্যস্ত করেছেন।
সম্মিলিত মোনাজাত সম্বন্ধে প্রখ্যাত আলেমগণের মতবাদ।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম হযরত আনোয়ার শাহ কাশিরি রাদিয়াল্লাহু আনহা এনার অভিমতে তিনি বলেন :
ফরজ নামাজের পর বহু দোয়া হাদিস ধারা প্রমাণিত কিন্তু সম্মিলিতভাবে হাত উঠানো ব্যতীত এ ব্যাপারে মুফতি আব্দুল হাই লুক নবী রাদিয়াল্লাহু আনহা ফতোয়া প্রদান করেছেন।
নিম্নেতা উল্লেখ করা হলো-
বর্তমান সমাজে চেয়ে প্রচলিত প্রথা চালু আছে অর্থাৎ ইমাম সাহেবের নামাজ শেষে সমবেত হয়ে হাত উঠায়ে দোয়া করে ও মুক্তাদীগণ আমিন-আমিন বলে এটি আমাদের মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে ছিল না। বিষয়টি ইবনে আব্দুল কাইয়ুম রাদিয়াল্লাহু আনহা পরিষ্কার বর্ণনা করেছেন।
অনেক স্থানে ফরজ নামাজ শেষেই ইমাম মুক্তাদী সকলে মিলে হাত উঠে দোয়া করা যে প্রথা চালু হয়েছে বাস্তবে এই প্রথা রাসুল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে কখনোই এটা ছিল না।
আর সর্বদা করা তো আরো বেশি মারাত্মক গুনাহ। তবে হ্যাঁ ফরজ নামাজের পর রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক দোয়া পড়ার প্রমান আছে। অতএব তিনি নামাজ শেষে এক এক সময় পাঠ করতেন। কিন্তু তা তিনি কখনোই সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে করতেন না।
এ ব্যাপারে প্রখ্যাত হাদিস গ্রহণ তো তিরমিজি শরীফে ব্যাখ্যা করা হয়েছে-
জেনে রাখ বর্তমানে হানাফী মাযহাবীগণ ফরজ নামাজের পরে হাত উঠিয়ে দোয়া করাকে যেভাবে ওয়াজিবের নেয় গুরুত্ব প্রদান করে, মনে হয় সম্মিলিত মোনাজাত একটি ওয়াজিব কাজ।
আমরা আমাদের দেশে দেখতে পাই ইমাম সাহেব গন সালাম ফিরিয়ে পশ্চিমমুখী হয়ে অথবা মুক্তাদিরগণের দিকে ফিরে একত্রে যেভাবে দোয়া করে। এটা কখনোই আমাদের নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরিকা নয়। আর এর সম্পর্ক কোন বিশুদ্ধ অথবা দুর্বল হাদিসও নেই।
তাই এটা স্পষ্টভাবে বলা যায় যে ফরজ নামাজের শেষে হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে দোয়া করা এবং। কোন বিষয় নিয়ে সকলে মিলে সম্মিলিতভাবে দোয়া করা আর তাদের সাথে সকল মুসলিমগণ আমিন বলা এটা সম্পূর্ণ বিদআত। কারণ আমাদের রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবাগণ রা কখনোই ফরজ নামাজ শেষে এবং কোন ক্ষেত্রেই সমন্বয়ে মোনাজাতের প্রমাণ এবং দলিল পাওয়া যায়নি।
সম্পূর্ণ হাদিস সমূহে আমরা যা জানতে পারলাম ও বুঝতে পারলাম তা হল-
শেষ কথা হল, ফরজ নামাজের পর সর্বদা সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করা রাসুল করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে প্রমাণিত নয়। তিনি কখনো এরূপ বলেননি এবং এই বিষয়ে সমর্থ্য করেননি। তার সাহাবাগণ কখনো নবী যা করেননি তারা তা কখনোই করেনি। তাই আমরা ধরে নিতে পারি যে ফরজ নামাজ শেষে সম্মিলিত মোনাজাত ধরা বিষয়টি জায়েজ নেই।
তাই আসুন আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি এই যেই-আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে বিদআত শিরক ও কুফুরি থেকে বিরত রাখেন। আর আমাদের নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে আল্লাহ তাআলার সঠিক ইবাদত করেছেন। আমরাও যেন ঠিক সেই সঠিক পন্থা অনুসারে ইবাদত করতে পারি। আমিন।
phudi ka code gand min daal lia ho kia?